আতিকুল ইসলাম লিটন
প্রকাশিত : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৪০০
অর্থকষ্টের কারণে ঋতুস্রাবের সময় মেয়েদের কাপড় ব্যবহারের দিন এবার ফুরাল।
পথশিশু ও দরিদ্রদের মধ্যে ‘এক টাকার আহার’ বিতরণ করে আলোচনায় আসা সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এবার আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি প্যাড বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
অক্টোবর থেকে কর্মসূচিটি চালু হচ্ছে। শুরুতে তিন লাখ প্যাড বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে সারা দেশে। সংগঠনটি আশা করছে, এর ফলে কাপড় ব্যবহারের ঝুঁকি থেকে সরে এসে প্যাড ব্যবহারের মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তাদের তৈরি করে। আর এরপর থেকে ছয়টি প্যাডের একটি প্যাকেটের জন্য মাত্র পাঁচ টাকা নেয়া হবে।
খরচ কমাতে কারও কাছ থেকে প্যাড না কিনে নিজেরাই সেগুলো উৎপাদন করবে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এরই মধ্যে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা শাখার প্রধান সালমান খান ইয়াসিন বলেন, ‘স্যানিটারি প্যাড তৈরির কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব গার্মেন্টে প্যাড তৈরিতে যারা কাজ করছেন, তারা সবাই আমাদের নারী ভলেন্টিয়ার (স্বেচ্ছাসেবী)। এতে উৎপাদন খরচ কম পড়ছে। এক প্যাকেটে ছয়টি প্যাড থাকবে। এতে ছয়টি প্যাড থাকবে। খরচ পড়ছে সাত টাকা। আমরা ভর্তুকি দেব দুই টাকা।’
ঋতুস্রাবের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ব্যবহার নিন্ম আয়ের নারীদের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে সচেতনতার অভাবও রয়েছে। মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তের নারীরা সামাজিক ট্যাবু থেকে বের হয়ে আসতে পারলেও নিন্ম আয়ের মানুষদের মধ্যে এখনো এ নিয়ে ট্যাবু রয়ে গেছে। তারা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতেও অস্বস্তিবোধ করে।
বিদ্যানন্দ বলছে, মেয়েদের জীবনে ঋতুস্রাবের সময়টি যন্ত্রণার। কিন্তু এই কষ্টের অনুভূতির চেয়ে বিব্রত এবং লজ্জাবোধের অনভূতিগুলোই প্রধান হয়ে ওঠে। তারা এ নিয়ে কথা বলতে চায় না, পরিবারের বড়রাও বিষয়টি অনেক সময় উপেক্ষা করে। ফলে এ নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য ও জ্ঞানের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্য, বিশেষ করে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পিরিয়ড বা মাসিকের সময়ে পরিচ্ছন্নতা বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা না থাকার কারণে নানা রকম অসুখবিসুখও হচ্ছে।
ঋতুকালীন অপরিষ্কার পুরোনো কাপড় ব্যবহার করলে জ্বর, তলপেটে ব্যথা ও মূত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। এ ছাড়া জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে। ইনফেকশন দীর্ঘদিন থাকলে পরবর্তিতে সেটি জরায়ুর ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক দিপ্তী চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচ টাকায় এই প্যাডগুলো দেওয়া হবে বিভিন্ন বস্তি, এতিমখানা এবং স্টেশনগুলোতে। যারা ব্যবহার নেই, তাদের কাছেই এই প্যাড পৌঁছে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে আমাদের বাসন্তী গার্মেন্টসে প্যাড তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।’
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা বিদ্যানন্দ একটি শিক্ষা সহায়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ৪০ জন কর্মকর্তা, কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা আটটি শাখা, নিজস্ব ক্যাম্পাসে নবনির্মিত অনাথাশ্রম আর পরিপূর্ণ স্কুলের স্বপ্ন দেখছে তারা।
সুবিধাবঞ্চিতদের বিনা পয়সায় পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি এক টাকায় আহার, এক টাকায় চিকিৎসা, এক টাকায় আইন সেবা দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ নিজেই উঠে এসেছেন সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি থেকে। তিনি বিদেশে থাকেন। নিজের উদ্যোগে আর অর্থায়নে শুরু করলেও এখন এটি শত মানুষের অনুদানে চলছে।
ঢাকা শাখা ছাড়াও চট্টগ্রাম, নারায়াণগঞ্জ, কক্সবাজার, রাজবাড়ী, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহে কার্যক্রম চালায় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
উইমেনজার্নাল/৪সেপ্টেম্বর/আআইএল/এজে